বয়স ৬৯ বছর। মাথার প্রায় সব চুলই পাকা। ভালো নাম আয়শা বেগম, সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে ৪ কি: লো: দূরে রাইস মিলে ধান শুকানোর কাজ করতেন।
শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার ১ নং গনপদ্দি ইউনিয়নের গনপদ্দি টি টি সির অদূরে আয়শার বাড়ি। প্রতিদিন প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক হেঁটে নকলা শহরের নিকটে শিল্প এলাকার বিভিন্ন রাইস মিলে ধান শুকানো আবার যখন ধানের কাজ না থাকে ইট ভাঙ্গতে আসতেন তিনি। শরীরে শক্তি খুব একটা পান না। তবুও ধান শুকানোর কাজ করেন, ধানের কাজ না থাকলে এক একটি করে ইট হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ছোট ছোট খোয়া তৈরি করেন। সারাদিন রাইস মিলে কাজ করে দিন শেষে মুজুরি হিসেবে যা পেতেন তা খুবই সামান্য। একটি ইট ভাঙ্গলে বিনিময়ে পান এক টাকা। এভাবে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১০৫টি ইট ভেঙ্গে রোজগার করেন তিনি।
আর এসব ধানের মেইল যারা পরিচালনা করেন তারা অনেক সম্পদশালী আবার ইটের খোয়ায় তৈরি হয় বড়লোকের আলিশান বাড়ি।
দরিদ্র আয়শা থাকেন কাগজের ঘরে।
আয়শা বেগম বলেন, নিজের নামে ৫ শতক জায়গা আছে ।স্বামী অনেক আগে মারা গেছেন। প্রায় ২৫ বছর ধরে রাইস মিলে ও ইট ভাঙ্গার কাজ করি। বয়স হয়েছে তাই চোখের নজরও কমে এসেছে।
ধানের মেইলে আগের মত আর কাজ করতে পারে না আয়শা বেগম। তাই কেউ আর কাজে নিতে চায় না, যখন কাজে না নিতে চায় তখন পেটের দায়ে ইট ভাঙ্গার কাজ করে আয়শা।
মাঝে মধ্যে হাতুড়ির বাড়ি ইটে না পড়ে তাঁর হাতে লাগে। এতে অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগতে হয় তাঁকে। এখন দুই পায়ে ব্যাথা হাটতে খুব কষ্ট হয়।
বর্তমানে আয়শা বেগম বাড়ির আশে পাশে অন্যের বাড়িতে কাজ করে নিজের খাবারের ব্যবস্থা করেন।
স্থানীয়রা জানায়, নি:সন্তান আয়শা বেগমের মত গৃহহীন অসহায় মহিলা ঘর পায় না, কি বলবো?
কোন রকমে কাগজের ঘর বানিয়ে বসবাস করেন তিনি। টাকার জন্য বসত ভিটায় মাটি কেটে উঁচুও করতে পারে না। তাই বর্ষা মৌসুমে বাড়িতে পানি উঠে।
একজন শ্রমিক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ইটের পর ইটের গাঁথুনি দিয়ে মানুষের জন্য দালানকোঠা গড়ে দেয়। শ্রমিকদের রক্ত পানি করা ত্যাগের বিনিময়ে আধুনিক পৃথিবীর সব সুযোগ-সুবিধা মানুষদের জন্য গড়ে উঠলেও শ্রমিকদের মাথা গোঁজার মতো একটা ছাদ থাকে না। চার দেওয়ালে আচ্ছাদিত একটা ঘর থাকে না।
দেশে যাতে কোনো গৃহহীন বা ভূমিহীন মানুষ না থাকে, সেজন্য তাদের খুঁজে বের করতে প্রশাসনের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে জমি কিনে গৃহহীন, ভূমিহীনদের বাড়ি করে দেওয়া হবে।
অসহায় গৃহহীন আয়শা বেগম উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি,দলীয় নেতাকর্মীদের নিকট প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে একটা ঘর প্রাপ্তির জন্য আকুতি জানান।
Leave a Reply