1. admin@channel21tv.com : channel21tv.com :
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন

বিশ্ব কবিতার বাসগৃহ-কবি নির্মলেন্দু গুণের স্লোগানে প্রতিষ্ঠিত- “কবিতাকুঞ্জ” :

রিপন কান্তি গুণ, বারহাট্টা উপজেলা প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৩৯১ বার পঠিত

 

পাবার আকুতি আর না–পাবার কষ্ট—

এ দুয়ারের মাঝের ব্যবধান কতটুকু

হয়তো এক সমুদ্র আকাশের মতো,

অথবা সমান্তরাল কোনো রেলপথ—

যার শুরুটা সবাই ছুঁতে পারলেও শেষটা আজও এক রহস্য।

বাংলা ভাষার অন্যতম কবি নির্মলেন্দু গুণ । কবিতাই তার ঘর-সংসার। ‘হুলিয়া’. ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’- এর মতো অসংখ্য কালজয়ী কবিতা রচনা করে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি।

তিনি নিজ জেলা নেত্রকোনা শহরে গড়ে তুলেছেন ‘বিশ্ব কবিতার বাসগৃহ’ স্লোগানে ‘কবিতাকুঞ্জ’ নামে একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান। বিশ্বে এই প্রথম ‘কবিতাকুঞ্জ’ নামে শুধু কবিতা বিষয়ক একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠল। কবিতাকুঞ্জের মূল উদ্দেশ্য- বিশ্বের সব ভাষার কবিদের কাব্যগ্রন্থ সংগ্রহ করা, গবেষণা করা এবং সব ভাষার কবিদের কবিতাকে একত্র করে তা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।

২০১৬ সালে কবি নির্মলেন্দু গুণ স্বাধীনতা পুরস্কারের সম্মনী দিয়ে নেত্রকোনা জেলা শহরের মালনী এলাকায় মগড়া নদীর তীরে আট শতাংশ জমির ওপর কবিতাকুঞ্জ গড়ে তোলেন। প্রথমে কবি নিজের অর্থ ব্যয় করে প্রতিষ্ঠানটির কাজ শুরু করলেও পরে অর্থ সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন অনেকেই।

কবিতাকুঞ্জের গ্রন্থাগারিক মাহমুদুল হাসান খোকন বলেন, ‘কবিতাকুঞ্জ দর্শনে আসেন দেশ-বিদেশের অনেক কবি এবং স্থানীয় কবিতাপ্রেমীরা।

যাদের মধ্যে রয়েছেন- স্থানীয় কবি, স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অনেকে। তিনি আরও বলেন, কবি-সাহিত্যিকরা কবিতাকুঞ্জে সংরক্ষিত বিভিন্ন ভাষার বই পড়তে ও কবিতাকুঞ্জ পরিদর্শনে আসেন।

স্থানীয় লোকজনের মতামত,নেত্রকোনার মতো একটি মফস্বল শহরে কবিতাকুঞ্জ প্রতিষ্ঠা করায় আমরা নির্মলেন্দু গুণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ।

বাংলাভাষা ও কবিতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃত স্বরূপ তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে, স্বাধীনতা পুরস্কার একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জেমকন সাহিত্য পুরস্কার, শান্তিনিকেতন সম্মাননা, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, উইলিয়াম কেরী পুরস্কার, আলাওল পুরস্কার, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন পদক এবং বঙ্গবন্ধু পদকসহ অগণিত পুরস্কার ।

স্বাধীনচেতা এই কবি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি যোগ দিয়েছিলেন, তখন তিনি প্রেরণায় জলে উঠে লিখেছিলেন, ‘আগ্নেয়াস্ত্রের মত সাড়া জাগানো কবিতা।

নির্জন নীলাকাশতলে, মগরা নদীতীরে, যখন সন্ধ্যার আলো জলে, তখন কবিতাকুঞ্জ কবিতার কথা বলে। বিশ্ববীণায় বাজে মহাজীবনের গান। বিচ্ছিন্ন মানবজাতি কবিতাকুঞ্জে বসে শোনে মহামিলনের ঐকতান’ (কবিতাকুঞ্জ) ।

কবির নিজ গ্রাম ‘কাশবন’-এর কাজ সমাপ্তির পর, বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হবে এবং কবি, সাহিত্যিক, কবিতাপ্রেমীদের পাঠ চর্চায় ও গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হবে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবনা থেকেই কবিতাকুঞ্জের সৃষ্টি ।

 

কবি বলেন, মূল ভবনটি তৈরি হওয়ার পর আমার মাথায় কবিতাকুঞ্জ (বিশ্বকবিতার বাসগৃহ) সারা বিশ্বের সকল ভাষার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কাব্যগুলোকে একত্রিত করার ধারণাটি আসে। কবিতা নিয়ে এরকম কোনো প্রতিষ্ঠান বিশ্বে কোথাও নেই। আমি খুব আনন্দ ও উত্তেজনাবোধ করি এরকম একটা খুব বড়-চিন্তা আমার মাথায় আসায়। আমি খুব খুশি হই। কবিতাকুঞ্জের ধারণাটি আমাকে এক উচ্চতর ভাবনাজগতে নিয়ে যায়। আমি একটা নতুন স্বপ্ন নিয়ে অগ্রসর হই, যার ফসল হলো আজকের “কবিতাকুঞ্জ” ।

 

সংগ্রহ: বিশ্বের প্রায় ৮৫টি ভাষার ১,৭০০টি কাব্যগ্রন্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। কবিতাকুঞ্জের ভেতরে কবির তৈরি চিত্রশিল্পসহ বিখ্যাত কবিদের প্রায় ৫৭টি ছবি সারি বেঁধে সাজানো রয়েছে। একটি কর্ণারে সংরক্ষিত রয়েছে কবির বই, কবিকে নিয়ে লেখা বই, উৎসর্গ করা বই, পুরস্কার পারিবারিক ও কবির ব্যক্তিগত কিছু ছবি । এ ছাড়াও রয়েছে কবিতাকুঞ্জের সামনে এবং পেছনে পরিবেশ বান্ধব কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া এবং শেফালি ফুলের গাছ।

 

আবাসিক ব্যবস্থা: দেশের দূর-দূরান্ত এবং দেশের বাইরে থেকে আসা কবি, সাহিত্যিক ও পাঠকদের রাত্রিযাপন করার জন্য রয়েছে মনোরম ও সুন্দর ব্যবস্থা, রয়েছে কুঞ্জঘাট সংলগ্ন মগড়া ও সোমেরী নামক দুটি অতিথিশালা।

 

কবি নির্মলেন্দু গুণ কবি হওয়ার যে আনন্দযজ্ঞে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন তরুণ বয়সে সেই আনন্দকেই তিনি বিশ্বকবিতার বাসগৃহ- কবিতাকুঞ্জের মাধ্যমে কবিতাপ্রেমীদের মাঝে নতুন ছন্দে বিলিয়ে দিতে চান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ
  • © All rights reserved © 2022 Channel21tv.Com
Design & Development By Hostitbd.Com