ঝিনাইগাতী মহারশি নদীর পানি প্রত্যাহার করে নালিতাবাড়ীতে নেওয়ার উদ্যোগ, ঝিনাইগাতীর হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার আশংকা
শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের নলকুড়া-রাংটিয়া মৌজা দিয়ে প্রবেশ করা মহারশি ঝিনাইগাতী উপজেলা একমাত্র পাহাড়ী নদী। এই নদীতে গত ২০১৩ সালে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি (জাইকা)’র অর্থায়নে মহারশি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির নামে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এলজিইডি শেরপুর। এই রাবার ড্যামটি নির্মাণের ফলে উপজেলার ১ হাজার ২ শত হেক্টর জমি বোর আবাদের আওতায়ভুক্ত হয়েছে এবং আরো ১ হাজার ২ শত হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া রাবার ড্যাম থেকে অতিরিক্ত পানি যেটুকু গড়িয়ে পড়ে নদীটিকে প্রবাহমান রেখেছে তা দিয়ে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের বনকালী, দিঘীরপাড়,চতল,আহম্মদনগর,হলদীবাটা, বনগাও,হাতীবান্ধা হয়ে মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের তিনানী বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোর চাষ করা হয়। শুকনো মৌসুমে এসব এলাকায় তীব্র পানি সংকট সৃষ্টি হয়। এছাড়াও দীর্ঘদিন থেকেই উজানের ফাকরাবাদ, ভারুয়া,হলদীবাটা, বণকালি, বন্দভাটপাড়া, বৌরাগীপাড়া এলাকার কৃষকরা তাদের এলাকায় বুড়ো চাষাবাদের জন্য রাবার ড্যামের পানি সরবরাহের দাবি জানিয়ে আসছেন।
এদিকে রাবার ড্যামের পানি প্রত্যাহার করে ৪ শত মিলি: মি: ব্যাসের পাইপলাইন বসিয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন অংশে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাবার ড্যামের উজানে হলদীগ্রামের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ’র বসত ভিটায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি (জাইকা)’র অর্থায়নে এবং এলজিইডি শেরপুরের বাস্তবায়নে বৃহৎ পরিসরে নির্মিত হচ্ছে পানির হাউজ। এই হাউজে পানি সংরক্ষণ করে তা নালিতাবাড়ীতে নেয়ার ফলে ব্যাপক ক্ষতির সন্মুখিন হবে ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষকগণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে ঝিনাইগাতী উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ ব্যাহত হবে এবং নদীতে পানি প্রবাহ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে হলদী গ্রামের বাসিন্দা সেলিম, মানিককুড়া গ্রামের খালেক সাইফুল্লাহ, নলকুড়া গ্রামের আব্দুর রশিদ, রাংটিয়া গ্রামের বাবুল মিয়া, স্থানীয় কৃষক শাজাহান চৌধুরী, গনি মিয়া, মনির মিয়া, কামরুজ্জামান, বাদল মিয়া সহ আরও অনেকেই জানান, ঝিনাইগাতী সদর, গৌরীপুর, হাতীবান্দা ও মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত মহারশি নদীর পানি ব্যবহার করে বোরো মৌসুমে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে বৈরো ফসল উৎপাদন করে থাকেন। কিন্তু ঝিনাইগাতীর স্বার্থ বিবেচনা না করে নালিতাবাড়ীতে পানি নেয়ার জন্য পাইপ লাইন বসানো হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন করা হলে এখানকার কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। নালিতাবাড়ীতে চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীতে একাধিক রাবার ড্যাম থাকার পরেও ঝিনাইগাতীর একমাত্র নদী মহারশীর পানি প্রত্যাহার করে নালিতাবাড়ীতে নেয়ার উদ্যোগ আমরা কোন ভাবেই তা মেনে নিতে পারিনা।
ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী জানান, ঝিনাইগাতীর মানুষ শতভাগই কৃষি ফসল উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। মহারশি নদীতে উজানে জিরু পয়েন্টে হলদীগ্রামে বৃহৎ পরিসরে পানির হাউজ নির্মাণ করে নালিতাবাড়ীতে পানি সরবরাহ কোন অবস্থাতেই ঠিক হবেনা।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ এসএমএ ওয়ারেজ নাইম জানান, রাবার ড্যামের অতিরিক্ত পানি দিয়ে ভাটি এলাকার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। উজানে আরো বহু জমিতে পানি সরবরাহ করতে এলাকাবাসী কৃষকদের দাবি রয়েছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার চাহিদা না মিটিয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে নালিতাবাড়ীতে পানি দেওয়া হলে ঝিনাইগাতীর কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক জানান, এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) মোহাম্মদ ফারুক আল মাসুদ এ বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “বিষয়টি আমি সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে দেখেছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানানো হবে”।
ঝিনাইগাতী উপজেলার স্বার্থ বিবেচনায় নালিতাবাড়ীতে পানি সরবরাহ করতে পাইপ লাইন না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষকগণ।
Leave a Reply