তুলা থেকে সুতা কেটে, বেইনকর্মীদের পঞ্চশীল গ্রহণ ও বেইনঘর উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে রাঙামাটি রাজবন বিহারে শুরু হয়েছে দুইদিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজবন বিহারের বেইনঘর ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান ভদন্ত শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। পরে চরকায় তুলা থেকে সুতা কেটে বেইন উদ্বোধন করেন চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ও তার সহধর্মিনী রাণী য়েন য়েন।
এ উপলক্ষে বুদ্ধমূর্তিদান,অষ্টপরিষ্কার দান,পঞ্চশীল প্রার্থনা, সুত্রপাঠ, ধর্মীয় দেশনা, তুলা উৎসর্গসহ নানাবিধ দান করা হয়। এসময় চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ও তার সহধর্মিনী রাণী য়েন য়েন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রম্ন চৌধুরী, রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক অমীয় খীসা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমার সহধর্মিনী রিপা চাকমা, আইনজীবি সুস্মিতা চাকমাসহ অন্যান্য প্রমূখ।
বিহার পরিচালনা কমিটির সূত্রে জানা গেছে, গৌতম বুদ্ধের সময়কালে তার প্রধান সেবিকা বিশাখা ২৪ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করে কাপড় বুনে সেলাই করে ভগবান বুদ্ধকে দান করেন। বিশাখার এই প্রবর্তিত কঠিন চীবর দানের স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৭৩ সালের ৫ ও ৬ নভেম্বর তারিখে লংগদুর তিনটিলায় সর্বপ্রথম কঠিন চীবর দানের রীতি প্রবর্তন করেন মহাপরির্নিবাণপ্রাপ্ত সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তে। এরপর থেকে ধর্মীয় ভাব মযার্দায় প্রতিবছর সারাদেশে বৌদ্ধধর্মালম্বীরা কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপন করে থাকে। বহস্পতিবার বেইন বুনন ও পরের দিন আজ শুক্রবার রাঙামাটি রাজবন বিহার মাঠ প্রাঙ্গণে কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপিত হবে।
এদিকে কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে রাঙামাটি রাজবন বিহারে দূর—দূরান্ত থেকে হাজারো পুণ্যার্থীর ঢল নামে। যদিও বিহার পরিচালনা কমিটির দাবি এবারের কঠিন চীবর দানে কমপক্ষে লক্ষাধিক পূণ্যার্থী ও মানুষের সমাগম ঘটবে। ‘বুদ্ধ কি..? ধর্ম কি..? ,সংঘ কি.? জয়’, এ ধ্বনিতে হাজারো পুণ্যার্থীদের ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মুখর হয়ে উঠে পুরো রাজবন বিহার প্রাঙ্গণ।
কঠিন চীবর দানে আসা পূণ্যার্থী বর্ষা চাকমা বলেন,‘বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার রাঙামাটি রাজবন বিহার। এ বিহারে লাখো মানুষের সমাগম দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে কঠিন চীবর দানে অংশ গ্রহণ করে থাকেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের বুদ্ধগয়া থেকেও রাজবন বিহারে বৌদ্ধ পূণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। আমিও এবারের কঠিন চীবর দানে অংশগ্রহণ করতে পেরে খুবই আনন্দিত।
আইনজীবি সুম্মিতা চাকমা বলেন,‘বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কঠিন চীবর দান হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ একটি দান। ২৪ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা এবং সুতা থেকে কঠিন চীবর তৈরি করে ভান্তেদের উদ্দেশ্য দান দেয়া। এবারে ৪৯তম দান অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’
কঠিন চীবর দানোৎসবের প্রসঙ্গে রাঙামাটি রাজবন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন,‘কোভিড—১৯ এর যে উপদ্রব তা চলে না গেলেও তা আগের চাইতে অনেক ভালোর দিকে যাচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা সমগ্র বিশ^ থেকে এ উপদ্রব চলে যাক। তবে শুধু কোভিড—১৯ নয় ডেঙ্গুও কিছুটা রয়ে গেছে। আমাদের প্রার্থনা হবে,এখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। বাংলাদেশের যে উন্নয়নের যাত্রা তা যথাযথ হোক। এছাড়া এবারে রাজবন বিহারে ৪৯তম কঠিন চীবর দানোৎসব তা যেন যথাযথভাবে পালন করতে পারি। বাংলাদেশ ও সারা পৃথিবীতে শান্তি বয়ে আসুক এ কামনা করছি।’
Leave a Reply