1. admin@channel21tv.com : channel21tv.com :
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন

নেত্রকোনায় পশু চিকিৎসকের সিজারে, প্রসূতিসহ নবজাকের মৃত্যু :

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা, বারহাট্টা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ৫ মে, ২০২২
  • ১৫৫ বার পঠিত

নেত্রকোনার বারহাট্টায় পশু চিকিৎসকের দ্বারা সিজারের পর নবজাতকসহ শরীফা আক্তার (১৯) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।  বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে মা ও নবজাতকের দাফন সম্পন্ন হয়। এ ঘটনায় এলাকায় চরম চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

(৪ঠা মে) বুধবার দুপুর দুইটার দিকে উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। প্রসূতি শরীফা ঐ গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী হাইছ উদ্দিনের মেয়ে।

অভিযুক্ত পশু চিকিৎসক হলেন,জীবনপুর গ্রামের আবুল কাশেম। পেশায় তিনি স্থানীয় একজন পশু চিকিৎসক। সহজ সরল মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পশুর পাশাপাশি বর্তমানে মানুষের চিকিৎসাও করেন। আবুল কাশেম গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে হেরে যান।

নিহত শরীফার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শরীফা বারহাট্টা সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করেছেন। গত বছর পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জের তাহেরপুর এলাকার মহসিন মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় শরীফার। সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে গত সপ্তাহে স্বামীর বাড়ি থেকে চন্দ্রপুর বাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। বুধবার হঠাৎ প্রসব ব্যথা ওঠলে চিকিৎসক আবুল কাশেম বাড়িতেই সিজার করেন। এরপর একটি ছেলে সন্তান জন্ম নিলেও মা-সন্তান দুজনই মারা যায়।

ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ডাক্তারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে মারমুখী হয়ে উঠলে কয়েকজন এলাকাবাসী ঐ ডাক্তারকে বাড়ির পেছন দিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

সরেজমিন গেলে উপস্থিত এলাকাবাসী জানায়, কাশেম একজন পশু চিকিৎসক। মানুষের চিকিৎসা করা তার ঠিক হয়নি। তারপর পর্যাপ্ত ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ছাড়া বাড়িতে সিজার করল কিভাবে তা আমাদের বোধগম্য নয়।

ভুক্তভোগীর মা মাফিয়া আক্তার খাতুন বলেন, সকালে শরীফার প্রসব ব্যথা শুরু হলে কাশেম চিকিৎসককে খবর দেওয়া হয়। তিনি রোগীকে দেখে বললেন, সবকিছু স্বাভাবিক আছে কোনো সমস্যা নেই। আমরা নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার কথায় ভরসা পেয়ে আর নেইনি। আমরা অশিক্ষিত সাধারণ মানুষ। চিকিৎকের উপর ভরসা করে তার কথা মতোই সব করেছি। পরে একপর্যায়ে তিনি সিজার করেন। এসময় ওষুধ ও সেলাইন না থাকায় এগুলো আনতে একজনকে মোহনগঞ্জ পাঠানো হয়। তবে, ওষুধ নিয়ে আসার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শরীফার মৃত্যু হয়।

শরীফার চাচা গিয়াস উদ্দিন ও আবুল কালাম বলেন, আবুল কাশেম একজন পশু চিকিৎসক। তবে মাঝে মাঝে মানুষের চিকিৎসাও করেন। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ছাড়াই শরীফার সিজার করে ফেলেন। পরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে একজনকে ওষুধ আনতে পাঠানো হয় মোহনগঞ্জে। অনেক দূরের পথ হওয়ায় ওষুধ নিয়ে আসার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শরীফার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, টানা-হেঁচড়া করতে গিয়ে সদ্য ভূমিষ্ঠ ছেলে সন্তানেরও মৃত্যু হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য লালন বখত মজুমদার বলেন, কাশেম একজন পশু চিকিৎসক। শুনেছি পশুর পাশাপাশি এখন মানুষের চিকিৎসাও করেন। তার এসব অনিয়ম বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই। না হলে আরও অনেকেই এভাবে ভুক্তভোগী হবে।

বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসিম তালুকদার বলেন, কাশেম একজন পশু চিকিৎসক। মানুষের চিকিৎসা বিশেষ করে সিজার করা তো তার একেবারেই উচিত হয়নি।

অভিযুক্ত পশু চিকিৎসক আবুল কাশেম সিজারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সিজারের পর ওষুধ আনতে পাঠানো হয়েছিল। দূরের পথ ওষুধ ও সেলাই আনতে দেরি হওয়ার এ ঘটনা ঘটেছে। তবে শুধু পশু নয় মানুষের চিকিৎসার সনদও তার আছে বলে দাবি করেছেন। তিনি আরও জানান, পশু চিকিৎসার পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে মানুষের চিকিৎসার সাথেও তিনি জড়িত আছেন।

মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসর (আরএমও) ডাঃ শাহরিয়ার জাহান ওসমানী বলেন, সিজার একটি গুরুত্বপূর্ণ  ও জটিল বিষয়। এটি এমবিবিএস এবং অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া কারো করার নিয়ম নেই।

বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফুল হক বলেন, এ ঘটনায় থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। তবে, খোঁজ নিয়ে দোষীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ
  • © All rights reserved © 2022 Channel21tv.Com
Design & Development By Hostitbd.Com