1. admin@channel21tv.com : channel21tv.com :
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২১ অপরাহ্ন

বাঘার মেলা না হওয়ার কারণে, জনগণ হতাশ হয়ে পড়ছে, ও হারিয়ে যাচ্ছে স্মৃতি

বাঘা রাজশাহী প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৭৮ বার পঠিত

বাঙালীর সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে মেলার গন্ধ। কখনও ঋতু কখনও
কৃষি কখনও নববর্ষ কখনও ঈদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে মেলা। বাংলার
ঐতিহ্যবাহি আকর্ষণ, পল্লী মেলা। এমন একটি মেলার আয়োজন করা হয়
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়। করোনকালের আর্তনাদে, বিগত ২ বছর বন্ধ ছিল
মেলা। এবারেও সেই মেলা নিয়ে ধোঁয়াশা। লাখো মানুষের প্রাণের
ছোঁয়ায় রাজশাহীর ঐতিহাসিক বাঘার ঈদ মেলা থেকে তাল পাতার বাঁশি
আর মিঠাইসহ হরেক রকমের পণ্য কেনার সেই দৃশ্য এবারও চোখে পড়বেনা।
হয়রত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রহঃ) ও তদ্বীয় পুত্র হযরত শাহ আব্দুল
হামিদ দানিশ মন্দ (রহঃ) এর পবিত্র ওরশ উপলক্ষে ঈদুল ফিতরের ঈদে অনুষ্টিত মেলার
ইতিহাস প্রায় ৫শ বছরের। আরবি শওয়াল মাসের ৩ তারিখ আধ্যাত্বিক
দরবেশের ওফাত দিবসে, ধর্মীয় ওরস মোবারক উৎসবকে কেন্দ্র করে বাঘার
ওয়াকফ এষ্টেটের বিশাল এলাকা জুড়ে বছর বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরে অনুষ্ঠিত
হতো মেলা। সেই মেলা বাঘা ঈদ মেলা নামে খ্যাত। বিভিন্ন পণ্যের পসরা
সাজিয়ে মেলায় বসতেন হাজারো ব্যবসায়ী। ওয়াকফ এষ্টেটের মাঠ ইজারা
দিয়ে মাজারের আয় হতো লক্ষ লক্ষ টাকা। বিধি মোতাবেক আয়কর এর অংশ পেত
বাঘা পৌরসভা। ২সপ্তাহের অনুমতি মিললেও মেলা চলতো টানা এক মাস।
খানকা বাড়ির মধ্যে রাতভর চলতো সামাকাওয়ালি,মারিফতি গানের আসর।
মেলা উপলক্ষে জামাইসহ মেয়েরা আসতো বাপের বাড়ি।
ওয়াকফ এষ্টেটের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন এবার মেলা হবেনা। কি কারণে
হবেনা,সে বিষয়ে স্পষ্ট কোন জবাব মেলেনি। তবে লোকজনের আলোচনা-
সমালোচনা থেকে ধারণা পাওয়া গেছে, অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখাসহ
কয়েকটি শর্ত দিয়ে মেলার জন্য ওয়াকফ এষ্টেটের মাঠ ইজারা দেওয়া হয়। তার
মধ্যে রয়েছে, মাঠ পরিস্কার করে দেওয়ার। কিন্তু যারা ইজারা নেন, তারা সেই
কাজটি করেন না। এর ফলে,অনেক দোকানি ওয়াকফ এষ্টেটের সম্পতি দখলে
নিয়ে মাসের পর মাস ব্যবসা চালাতে থাকেন। আর ফায়দা লুটে
মধ্যস্বত্বভুগিরা। এদিকে, মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যম ফেইস বুক পেইজে পোষ্ট দিয়ে মেলা অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সানোয়ার হোসেন সুরুজ সহ অনেকেই।
জানা গেছে, ওরশের সঙ্গে ঈদের বাড়তি আনন্দ যোগাতে মেলার আয়োজন করা
হতো। বাঘা উপজেলাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ঐতিহ্য
হয়ে মিশে রয়েছে ঈদুল ফিতরের ঈদে অনুষ্ঠিত বাঘার এই মেলা। তাই মেলা
এখানকার মানুষের কাছে গভীর আগ্রহের। শুধু বাঘা নয়, আশপাশের বিভিন্ন
উপজেলার মানুষ,যোগ দিতেন এই মেলায়। এমনকি সীমান্তবর্তী এলাকার
যাদের স্বজনরা সীমান্তের ওপারে আছেন,তারা বছরের এই সময়টা বেছে
নিতেন একে অপরের সাথে দেখা করার জন্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাদের

বাস তারাও ছুটে আসতেন। ঈদের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে বাড়তি
উৎসবের আমেজে মেতে ওঠতেন বাঘাসহ আশেপাশের উপজেলার মানুষ।
ধর্মীয় উৎসব হলেও সব সম্প্রদায়ের মানুষের পদচারনায় মিলন মেলায় পরিনত
হতো ঈদ মেলা। ঈদুল ফিতরের উৎসবকে কেন্দ্র করে এত বড় মেলা দেশের অন্য
কোথাও হয় বলে জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত ঃ ধর্মীয় আদর্শের দিক-নির্দেশনার মহৎ পুরুষ আব্বাসীর বংশের
হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রঃ)ও তার ছেলে হযরত আব্দুল হামিদ
দানিশমন্দ (রঃ) এর সাধনার পীঠস্থান বাঘা। প্রায় ৫০০ বছর আগে সুদূর
বাগদাদ থেকে ৫ জন সঙ্গীসহ বাঘা এসেছিলেন ইসলাম প্রচারের জন্য।
বসবাস শুরু করেন, পদ্মা নদীর কাছে কসবে বাঘা নামক স্থানে। আধ্যাত্মিক
শক্তির বলে এলাকার জনগণের মধ্যে ইসলাম প্রচারে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন।
বাঘা ওয়াকফ এস্টেটের মোতয়াল্লী ও মাজার পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব
খন্দকার মুনসুরুল ইসলাম (রইশ) জানান, এবার ঈদের জামায়াত হলেও মেলার
আয়োজন করতে নিষেধ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মূলতঃ ওরশ ও ঈদুল ফিতরের
নামাজ আদায়কে কেন্দ্র করে দেশের দুর দুরান্ত নারি পুরুষদের সমাগম হতো ।
কেউ আসতেন নামাজ আদায় করতে,কেউ আসতেন ওরশে। পরবর্তীতে যা
মেলায় রুপ নেয়। কমিটির সহ সভাপতি উপজেলা নির্বাহি অফিসার
পাপিয়া সুলতানা বলেন, এবার মেলা হচ্ছেনা। এ বিষয়ে মাজার পরিচালনা
কমিটির সভাপতি রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল জানিয়েছেন,
কোনো প্রতিষ্ঠানে অর্থের প্রয়োজন হলেই কেবল উন্নয়নমূলক কোনো
কিছু করার সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে এই ওয়াকফ এস্টেটের অর্থের কোনো
ঘাটতি না থাকায় মেলা করা হবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ
  • © All rights reserved © 2022 Channel21tv.Com
Design & Development By Hostitbd.Com