1. admin@channel21tv.com : channel21tv.com :
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৬:০০ অপরাহ্ন

ফসল হারানোর ভয়ে, কাঁচা ধান কাটছেন হাওরের কৃষকরা:

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা, বারহাট্টা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৭৬ বার পঠিত

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে টানা কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার বড় নদ-নদীগুলোর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদে পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় হাওরের একমাত্র ফসল বোরো ধান নিয়ে শঙ্কায় আছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

বিশেষ করে নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদীর পানি আগের তুলনায় আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের হাওরগুলোতে থাকা কাঁচা ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় প্রদেশের চেরাপুঞ্জিতে ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সুরমা নদী দিয়ে নেমে খালিয়াজুরী পয়েন্টে ধনু নদীর পানি বেড়েছে ১০ সেন্টিমিটার। সোমবার (০৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে পরিমাপ করে দেখা গেছে, ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র ৫৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে ১৮৩ কিলোমিটার বাঁধের কোনো অংশ এখনও ভাঙেনি। আমরা বাঁশ এবং জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধগুলো আরও মজবুত করার চেষ্টা করছি।

স্থানীয় কৃষক সমাজ, উপজেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, মদন মূলত হাওরাঞ্চল। হাওরের একমাত্র ফসল বোরোর ওপরই নির্ভর করে কৃষকদের সারা বছরের সংসার খরচ, চিকিৎসা, সন্তানদের পড়ালেখা ও আচার-অনুষ্ঠান করে থাকে। জেলায় ছোট-বড় মোট ১৩৪টি হাওরের মধ্যে খালিয়াজুরীতে ৮৯টি হাওর আছে। হাওরাঞ্চলে ৩০০ কিলোমিটার ডুবন্ত (অস্থায়ী) বাঁধের মধ্যে খালিয়াজুরীতে ১৮১ কিলোমিটার, মোহনগঞ্জে ৬১ কিলোমিটার ও মদনে ৪৬ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ আছে। ওই বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল নির্ভর করে। হাওরের ফসল রক্ষায় এ বছর পাউবো উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রায় ৩৩ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, খালিয়াজুরী উপজেলার নিম্নাঞ্চল কীর্তনখোলা, লক্ষ্মীপুর, চুনাই, বাইদ্যারচর, কাটকাইলের কান্দা, টাকটার, মনিজান, লেবরিয়া, হেমনগর, গঙ্গাবদর, নয়াখাল, বাগানী, বৈলং ও ডাকাতখালী হাওরের জমিগুলো তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, অনেকে পানিতে ডুবে যাওয়া কাঁচা ধান কেটে কিছু পরিমাণ হলেও ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। এছাড়া হাওর এলাকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে হাওরাঞ্চলের বোরো চাষিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাই তারা ফসল হারানোর ভয়ে কাঁচা ধান কাটছেন।

খালিয়াজুরী সদরের লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, জমিগুলোর ধান পাকতে আরও ১০-১৫ দিন দরকার ছিল। তবুও নিরূপায় হয়ে কেটে ফেলতে হচ্ছে। ধান না হোক অন্তত গরুর খাবারটা সংগ্রহ করা যাবে।  তিনি আরও বলেন, যেভাবে পানি বাড়ছে যদি আরও তিন-চার দিন এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে সব ফসল তলিয়ে যাবে।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফ এম মোবারক আলী বলেন, ‘হাওরাঞ্চলে কিছু এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। আর দুই সপ্তাহ পর পুরোদমে হাওরে ফসল কাটা শুরু হবে। তবে আগাম বন্যার জন্য খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছি। আমরা চাষিদের আগাম জাতের ধান লাগানোর পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু অনেকেই অধিক ফলনের আশায় আগাম জাতের ধান কম লাগান।’

খালিয়াজুরীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, “গত বৃহস্পতিবার থেকে ধনু নদে পানি বাড়তে শুরু করে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ফসল রক্ষা বাঁধ ভাঙেনি। কিন্তু নিম্নাঞ্চল কিছুটা প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাশাপাশি আমরা বাঁধের পিআইসি কমিটির সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষকদের সতর্ক থাকতে বলেছি। যেখানে জিও ব্যাগ ফেলার দরকার, সেখানে তা প্রস্তুত রেখেছি। পানি বাড়লে ঝুঁকি বাড়বে, সে ক্ষেত্রে সবার সতর্ক থাকতে হবে।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ
  • © All rights reserved © 2022 Channel21tv.Com
Design & Development By Hostitbd.Com