নওগাঁর মহাদেবপুরে পাওনা টাকার জেরে অটো ভ্যান চালক মহসিন আলীকে হত্যার অভিযোগে বন্ধু সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাখাওয়াত হোসেনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন বলে এমনটিই জানিয়ে বৃহষ্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া। মহসিনের দেওয়া তথ্য মতে অটো ভ্যান ক্রেতা প্রদীপ চন্দ্রকে বগুড়ার সান্তাহার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার রাতে মহাদেবপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর দক্ষিণপাড়া তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মহসিন একই গ্রামের আবু তালেবের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৩ জানুয়ারি দুপুরে অটোভ্যান নিয়ে ভাড়ার জন্যে বাড়ি থেকে বের হয় মহসিন আলী। কিন্তু রাতে বাড়ি না ফেরায় ১৪ জানুয়ারি মহসিনের বড় বোন মর্জিনা বেগম থানায় একটি জিডি করলে ২১ জানুয়ারি বিকেলে মহাদেবপুর উপজেলার এনায়েতপুরে একটি হলুদ ক্ষেত থেকে মহসিনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ২২ তারিখে মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা তদন্তের সময় পুলিশ ধারণা করে তার বন্ধু সাখাওয়াত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে। পরে স্থানীয় সোর্স ও প্রযুক্তি মাধ্যমে বুধবার রাতে তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, দুই মাস আগে মহসিনের বিয়ের সময় সাখাওয়াত হোসেনের কাছ থেকে সুদে তিন হাজার টাকা ধার নেন। পরে মহসিন ১ হাজার টাকা পরিশোধ করলে বাঁকি ২ হাজার টাকা দুই মাস পার হয়ে গেলেও ফেরত দেননি। এদিকে সমিতির লোকজন সাখাওয়াত হোসেনকে টাকা পরিশোধ করতে চাপ দিতে থাকে।
এরই মধ্যে সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে দু:শ্চিন্তাগ্রস্থ্য হয়ে পড়েন। তখন সাখাওয়াত ১৩ জানুয়ারি দুপূর ২টার দিকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা আছে বলে মহসিনকে ডেকে নেন উপজেলার মাতাজির মোড়ে। সেখান থেকে অটোভ্যান যোগেই উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের মহিষবাথান যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যান তাকে। সন্ধ্যায় মহিষবাথান মোড়ে আসলে সেখান থেকে কৌশলে রাত ৯টার দিকে মহিষবাথান বালু পয়েন্টের দিকে নিয়ে যান। বালু পয়েন্টের ব্রিজের উপর অটো ভ্যানটি দাঁড় করে পাওনা টাকার বিষয়ে কথা হতে থাকলে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বাকবিতÐা শুরু হয়। এ সময় সাখাওয়াত হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে পাশে পড়ে থাকা ইট ও সিমেন্টের ঢালাই টুকরা দিয়ে মহসিনের মাথায় আঘাত করলে মহসিন জ্ঞানশুন্য হয়ে পরেন। পরে সেখান থেকে তাকে ২শ’ গজ দক্ষিণে একটি হলুদ ক্ষেতের ভেতর নিয়ে গিয়ে পুনরায় কয়েকবার মাথায় আঘাত করে মহাসিন মৃত্যু নিশ্চিত করে অটো ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যান।
পরদিন ঘুম থেকে উঠে অটো ভ্যানটি চালিয়ে বগুড়ার সান্তাহারে তার পরিচিত প্রদীপ চন্দ্রের রেলওয়ে ড্রাইভার ইয়ার্ড কলোনীর বাড়িতে নিয়ে যান এবং তার নিকট সাড়ে ৮ হাজার টাকা দিয়ে অটো ভ্যানটি বিক্রি করেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, সাখাওয়াতকে আটকের পরে তার দেয়া তথ্য মতে সান্তাহার থেকে চার্জারের খÐ খন্ড অংশ উদ্ধার করা হয় এবং আলামত নষ্ট করার অভিযোগে প্রদীপ চন্দ্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার তাদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম মামুন খান চিশতি ও গাজিউর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার সুরাইয়া আকতারসহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply