1. admin@channel21tv.com : channel21tv.com :
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৪ পূর্বাহ্ন

বারহাট্টায় নির্মাণকাজে গাফিলতিতে ভেঙ্গে  পড়লো নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের ভিম।

রিপন কান্তি গুণ, বারহাট্টা উপজেলা প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : সোমবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২২
  • ২২৯ বার পঠিত

নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টায় প্রায় (১২ কোটি ৫০ লক্ষ) টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের একটি “গ্রেট ভিম” গতকাল (৩০জানুয়ারি/২২) রোববার রাতে ভেঙ্গে পড়েছে। তদারকির ঘাটতি ও নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার এবং রডের যথাযথ বাঁধাই না হওয়ায় মসজিদটি নির্মাণের মাঝপথে এই ত্রুটি ধরা পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা যায়, সরকারের ঘোষণা মোতাবেক ২০১৮ সালে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটি মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। বলা হয় যে, এসব মসজিদ হবে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এতে মহিলাদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া থাকবে অটিজম কর্নার, ইমাম ট্রেনিং সেন্টার, ইসলামী গবেষণা ও দাওয়াত কার্যক্রম, হেফজখানা, শিশু শিক্ষার ব্যবস্থাসহ আরো অনেক কিছু।

উপজেলা পর্যায়ের তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৪২ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা। বারহাট্টা-আটপাড়া সড়কের কোর্টভবন এলাকায় বারহাট্টা উপজেলা মডেল মসজিদটি নির্মিত হচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগের তত্বাবধানে স্টার লাইট সার্ভিসেস লিমিটেড এবং মেসার্স নায়মা এন্টারপ্রাইজ নামে দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল মসজিদটি নির্মাণের দায়িত্ব পায়। বর্তমানে মেসার্স নায়মা এন্টারপ্রাইজকেই সাইটে পাওয়া যাচ্ছে। নির্মাণ কাজের সময় শেষ হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরু থেকেই নির্মাণকাজে গাফিলতি চলছে। ঠিকাদার অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে। কলাম ও ভিমে দশ মিলি রড ব্যবহার করা হয়েছে। সিমেন্ট অপর্যাপ্ত। সকল রড মরিচা ধরা। নির্মাণের পর থেকে কিউরিং চোখে পড়ে নাই। সরকারি প্রকৌশলী মাঝে মাঝে আসলেও ঠিকাদারের লোকজনের সাথে দশ-পনের মিনিট কথা বলে চলে যায়। সোমবার সরেজমিনে মসজিদটি দেখতে গেলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে গণপূর্তবিভাগের প্রকৌশলী ও কাজের ঠিকাদারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস. এম. মাজহারুল ইসলাম নির্মাণাধীন মসজিদের তিন তলায় উপস্থিত হন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. শহীদুর রহমান, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. নূর উদ্দিন, বারহাট্টা হাফিজিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা আনোয়ারুল হক, রাজনীতিক শামছ উদ্দিন আহমেদ বাবুল, সমাজকর্মী মতিশ চন্দ্র সরকার নান্টু, গণমাধ্যমকর্মী লতিবুর রহমান খানসহ অনেকেই বলেন, রোববার সন্ধ্যারাতে হঠাতই বিকট আওয়াজ শুনে আমরা ভয় পেয়ে যাই। পরে জানতে পারি যে, নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের তিনতলায় দক্ষিণ পাশের একটি গ্রেট ভিম ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা সবাই ঘটনাস্থলে যাই ও আফসোস করি। এ সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ করা সাইট ইঞ্জিনিয়ার (ডিপ্লোমা) আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে এসে ছবি তুলতে নিষেধ করেন। তার কথা উপেক্ষা করে অনেকেই ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন। উপস্থিত স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ার হোসেন প্রকল্পের ডিজাইন ও নির্মাণ ত্রুটির কথা স্বীকার করেন। এ সময় স্থানীয়রা ভেঙ্গেপড়া ভিমটি না সরানো এবং যেভাবে আছে সেভাবেই রাখার জন্য আনোয়ার হোসেনকে বলেন। কিন্তু সোমবার সকালে গিয়ে ভেঙ্গে পড়া ভীমের কোন চিহ্নই পাওয়া যায় নাই। আশপাশের লোকজন জানায়, ভেঙ্গে পড়া গ্রেট ভিমটি গভীর রাতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উপস্থিত স্থানীয়দের সবাই বলেন, মডেল মসজিদের সকল কাজে অপর্যাপ্ত রড-সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। যে কারণে নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ভিম ভেঙ্গে পঢ়েছে। কোন কোন কলাম কাত হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও ফাটল ধরেছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, প্রকল্পের প্ল্যান-ইস্টিমেট অনুয়ায়ী কাজ করা হচ্ছে। নির্মাণকাজে উন্নতমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস. এম. মাজহারুল ইসলাম বলেন, মডেল মসজিদটির নির্মাণকাজে ক্রটির ব্যাপারে অনেকেই আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি দুইদিন পরিদর্শনে এসেছি, সাইট ইঞ্জনিয়ারকে পাই নাই। বিষয়টি ডিসি মহোদয়কে অবগত করেছি। গ্রেট ভিম ভেঙ্গে পড়ার বিষয়টিও জানিয়েছি। ডিসি মহোদয় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসিনুর রহমান বলেন, পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে ত্রুটি ধরা পড়ায় আমরাই ওই গ্রেট ভিমটিকে ভেঙ্গে ফেলতে বলেছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ
  • © All rights reserved © 2022 Channel21tv.Com
Design & Development By Hostitbd.Com