শেরপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গানের আসরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঝিনাইগাতীর বাউল কন্যা কিশোরী মনি সরকার।
কেবলমাত্র অভাবের তাড়নায় বাউল বাবা ছামিদুল ফকিরের হাত ধরে মাত্র ৭ বছর বয়সে গানের জগতে প্রবেশ করেন বর্তমানে দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া কিশোরী মনি সরকার।
বাবা ছামিদুল ইসলাম ফকির শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া গ্রামের একখন্ড সরকারি খাস জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন প্রায় ৩০ বছর যাবত। ছামিদুল তার স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে হাট বাজারের বিভিন্ন গানের আসরে গান গেয়ে অতি কষ্টে দিন যাপন করে আসছে। বড় কন্যা ছানোয়ারা পারভীন মনি ওরফে মনি সরকারের বয়স যখন ৭ বছর তখন থেকেই সে বাবার সাথে গানের জগতে প্রবেশ করে গানের আসরে গান শুরু করেন।
বাবার সাথে গান গেয়ে বাড়তি কিছু আয় শুরু হলেও করোনা মহামারিতে সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আবারও তারা অর্থ সংকটে পড়ে যায়।
মনি সরকার গানের পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিল স্থানীয় রাংটিয়া হাই স্কুলে সেখান থেকে তার চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও করোনার গ্রাসে পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা জোগার করতে না পারায় এবার এসএসসি পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি কিশোরী মনি সরকারের।
সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠলে আবারও বাবা মেয় মিলে দর্শকদের মন মাতায় গানের আসরে।
সম্প্রতি তারা একটি গানের আসর থেকে বাড়ি ফেরার পথে শেরপুর শহরের শেরী ব্রীজ এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় বাবা মেয়ে। ঐ সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়ের চেয়ে বাবা বেশি আহত হয়ে এক চোখ নষ্ট হয়ে যায় এবং এক পা’ও প্রায় অচল হয়ে যায়। তাই এখন কিশোরী মনি সরকার একক ভাবে বিভিন্ন মঞ্চে গান গেয়ে যাচ্ছেন।
মনি সরকার অসাধারণ সুরে দর্শক মাতাচ্ছেন শেরপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার গানের মঞ্চে।
কিশোরী মনি সরকার বাউল গানসহ লালন ও ফোক গানের পাশাপাশি অন্যান্য গানও গেয়ে যাচ্ছেন। তবে ফোক ও বাউল গানেই বাড়ছে দিনদিন তার জনপ্রিয়তা।
মনি সরকার ইতিমধ্যে স্কুল ও বিভিন্ন সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বেশ কয়েকটি পুরুষ্কার ও সম্মাননাও পেয়েছেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় মঞ্চে গান গেয়ে দর্শক মাতিয়ে পেয়েছেন অনেক উপহার ও নগদ টাকা।
আগামী দিনে কিশোরী মনি সরকার একজন ফোক ও বাউল শিল্পী হওয়ার আশা ব্যাক্ত করেছেন। এতে করে বেছে নিয়েছেন গুরু হিসেবে তার বাবাকেই।
কিশোরী মনি সরকার যেমন গান গেয়ে উজ্জল করবে তার পরিবারের মুখ তেমনি করে সুনাম বয়ে আনবে শেরপুর বাসীর জন্য এটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
Leave a Reply