অনলাইন ডেস্ক: দেশে সম্প্রতি আনঅফিসিয়াল ফোন বন্ধের সরকারী নীতিমালা জারি হওয়ার পর থেকেই অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল ফোন এর ব্যাপারটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে/শর্তে আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোন নিবন্ধনের সুযোগ করে দিচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
আনঅফিসিয়াল মোবাইল অফিসিয়াল করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানার আগে আমাদের অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল ফোনের মধ্যে পার্থক্যসমুহ বুঝতে হবে। চলুন প্রথমেই সে ব্যাপারে আলোচনা করা যাক।
অফিসিয়াল মোবাইল ফোন হচ্ছে সেসব ফোন যেগুলো বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারী ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত আছে। এই ডাটাবেজের নাম হচ্ছে এনইআইআর (NEIR) বা ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার। মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের আইইএমআই (IEMI) নম্বর এই ডাটাবেজে নিবন্ধিত করে হ্যান্ডসেটগুলোকে দেশে বৈধতা দেওয়া হয়। স্মার্টফোন দেশের মধ্যে উৎপাদিত হোক কিংবা দেশের বাইরে থেকে আনা হোক, এনইআইআর এর ডাটাবেজে ফোনটি নিবন্ধিত না থাকলে সেটি অবৈধ ফোন বলে বিবেচিত হবে।
বিক্রেতা কর্তৃক বিদেশ থেকে আমদানী করা মোবাইল ফোনগুলো আইন অনুযায়ী সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করে দেশের বাজারে প্রবেশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেসব মোবাইল ফোন কোম্পানি অথবা ফোন বিক্রেতা বিদেশ থেকে বৈধভাবে ফোন আমদানি করেন তারা সরকারকে উপযুক্ত কর প্রদান করে ফোনগুলো সরকারী তথ্যভাণ্ডারে নিবন্ধন করে রাখেন। এছাড়া দেশে উৎপাদিত ফোনগুলোও এই তথ্যভাণ্ডারে নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় নিবন্ধিত করে রাখা হচ্ছে। যেসব ফোন নিবন্ধিত করা হচ্ছে সেগুলোকেই বৈধ ফোন বা অফিসিয়াল ফোন বলা হয়।
অন্যদিকে যেসব ফোন বিদেশ থেকে আমদানী করে সরকারকে ট্যাক্স না দিয়েই দেশের বাজারে বিক্রি করা হয় সেগুলো সরকারি তথ্যভাণ্ডারে নিবন্ধিত থাকেনা। কারণ নিবন্ধন করতে হলে উপযুক্ত ট্যাক্স প্রদান করতে হবে বা নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে যেতে হবে। সুতরাং এনইআইআর (NEIR) বা ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার ডাটাবেজে যেসব ফোন নিবন্ধিত নেই সেগুলোকে আনঅফিসিয়াল ফোন বা অবৈধ ফোন বলা হয়।
আনঅফিসিয়াল ফোনগুলোর কারণে দেশ যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়, তেমনি সেই ফোনগুলো চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে ফোনের মালিকরা ফোনগুলো খুঁজে পেতে বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হয়রানির শিকার হন।
এখন থেকে দেশের বাজারে ট্যাক্স বা কর ফাঁকি দিয়ে বা নীতিমালা না মেনে প্রবেশ করা ফোনগুলো নির্দিষ্ট সময় পর নেটওয়ার্ক সার্ভিস সুবিধা পাবেনা, এমন ব্যবস্থা নিয়েছে বিটিআরসি। এর ফলে আনঅফিসিয়াল ফোনগুলোতে সিম এর সুবিধাসমূহ উপভোগ করা যাবেনা। এই সমস্যাটি স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে অনেকের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিটিআরসির NEIR পেজে দেওয়া নির্দেশনায় বলা আছেঃ
দেশের অভ্যন্তরে যে কোন মোবাইল হ্যান্ডসেট ক্রয়ের পূর্বে অবশ্যই হ্যান্ডসেটটির বৈধতা যাচাই করে নিন। অবৈধ হ্যান্ডসেট কোনো অবস্থাতেই বিশেষ নিবন্ধনের জন্য গ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে না। বিদ্যমান ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে শুল্কবিহীন সর্বোচ্চ ২টি এবং শুল্ক প্রদান সাপেক্ষে আরও ৬টি মোবাইল হ্যান্ডসেট আনতে পারবেন। শুধুমাত্র ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী বহনকৃত হ্যান্ডসেট সমূহ বিশেষ নিবন্ধনের আওতাভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।
অর্থাৎ আপনি যদি দেশের ভেতর থেকে একটি আনঅফিসিয়াল ফোন কেনেন, তাহলে সেটির নেটওয়ার্ক ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যাবে। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী দেশের মধ্য থেকে আনঅফিসিয়াল ফোন কিনলে সেটি নিবন্ধনের কোনো সুযোগ দেয়া হবেনা।
তবে, বিদেশ থেকে বৈধভাবে কিনে দেশে আনলে অথবা কেউ আপনাকে বিদেশ থেকে ফোন কিনে উপহার দিলে সেই ফোনগুলো নিবন্ধন করা যাবে। সেক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২টি ফোন নিজের নামে ট্যাক্স ছাড়াই নিবন্ধন করতে পারবেন। শুল্ক বা ট্যাক্স প্রদান সাপেক্ষে এভাবে বিদেশ থেকে আনা আরও ৬টি ফোন নিজের নামে রেজিস্টার করা যাবে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট সরবরাহ করতে হবে।
আনঅফিসিয়াল ফোন ব্যবহারে দেশে যেহেতু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যাবে আনঅফিসিয়াল ফোনসমুহ থেকে সিম এর সেবাসমুহ। অফিসিয়াল ফোন এর চেয়ে দাম বিবেচনায় কিছুটা কম দামের হলেও আনঅফিসিয়াল ফোনের ক্ষেত্রে কোনো গ্যারান্টি বা ওয়্যারেন্টি দেওয়া হয়না।
আনঅফিসিয়াল ফোনের যেহেতু কোনো বৈধতা নেই, তাই আপনি ফোন কিনলেও ফোনের বৈধ মালিকানা পাওয়া যাবেনা। আবার অনেকসময় ফোন হারিয়ে গেলে আনঅফিসিয়াল ফোনের ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থাও নিতে পারবেননা। এক্ষেত্রে আনঅফিসিয়াল ফোন ব্যবহারকারী নিজেই সমস্যায় পড়তে পারেন।
আবার অনেকসময় পুরোনো ফোন রিফার্বিশড করে বিক্রি করতে দেখা যায় আনঅফিসিয়াল ফোনের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ সহজ কথায় বলতে গেলে আনঅফিসিয়াল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রচুর প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আনঅফিসিয়াল মোবাইলসমুহের সিম এর সেবাসমুহ কখন বন্ধ হবে, তা সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। তবে সেই সিদ্ধান্ত জানাও হয়ত সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই আনঅফিসিয়াল ফোন না কেনাই শ্রেয়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক অফিসিয়াল বা আনঅফিসিয়াল মোবাইল চেনার উপায় ও আনঅফিসিয়াল মোবাইল রেজিস্টার করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
কোনো মোবাইলের বৈধতা যাচাই করা অর্থাৎ ফোনটি অফিসিয়াল নাকি আনঅফিসিয়াল তা যাচাই করা কিন্তু খুবই সহজ। ফোনের বৈধতা যাচাই করতে দরকার পড়বে আইএমইআই নাম্বারের। ফোনের আইএমইআই নাম্বার জানতে *#06# ডায়াল করুন। এখন আপনার ফোনের ১৫ডিজিটের আইএমইআই নাম্বারটি কোথাও লিখে রাখুন।
এরপর ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুনঃ KYD<space>১৫ডিজিটের আইএমইআই কোড। মেসেজটি পাঠিয়ে দিন 16002 নাম্বারে। ফিরতি মেসেজে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে আপনার মোবাইল ফোনটি বিটিআরসি এর ডাটাবেসে রয়েছে কিনা।
আপনার মোবাইল ফোনটি যদি বিটিআরসি এর ডাটাবেসে থাকে, তাহলে বুঝবেন আপনার ফোনটি অফিসিয়াল। আবার আপনার ফোনটি যদি বিটিআরসি এর ডাটাবেসে না তাহলে, আপনার ফোনটি আনঅফিসিয়াল।
এ ব্যাপারে বিটিআরসির এনইআইআর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছেঃ
বিদেশ থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে বৈধভাবে ক্রয়কৃত অথবা উপহারপ্রাপ্ত মোবাইল হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয় ভাবে নেটওয়ার্কে সচল থাকবে। ১০ দিনের মধ্যে অনলাইনে তথ্য বা প্রয়োজনীয় দলিল প্রদান করার জন্য এস এম এস প্রদান করা হবে। দশ দিনের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করলে উক্ত হ্যান্ডসেট বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। উক্ত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন না করা হলে হ্যান্ডসেটটি বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে না এবং সেগুলো সম্পর্কে গ্রাহককে এসএমএস মাধ্যমে অবহিত করে পরীক্ষাকালীন সময়ের জন্য নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। পরিক্ষাকালীন সময় অতিবাহিত হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিদেশ থেকে আনা কিংবা উপহার পাওয়া আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোন বিটিআরসি প্রদত্ত ওয়েবসাইট ব্যবহার করে রেজিস্টার বা নিবন্ধনের জন্য বিশেষ আবেদন করা যাবে।
আনঅফিসিয়াল মোবাইল বিশেষ নিবন্ধন এর জন্য আবেদন করতে হলে প্রথমেই ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার এর ওয়েবসাইটে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। উক্ত ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলতেঃ
ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার এর ওয়েবসাইটে একাউন্ট খোলার পর এবার চাইলে আপনার আনঅফিসিয়াল মোবাইল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আনরেজিস্টার্ড আনঅফিসিয়াল মোবাইল নিবন্ধনের আবেদন করতে প্রথমেই ফোনে আপনার নিজের নামে রেজিস্টার্ড সিম কার্ড প্রবেশ করিয়ে নেটওয়ার্ক সচল করে নিন। এরপর নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ
বিটিআরসির ঐ নিবন্ধন সাইটের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, (উপরের স্ক্রিনশটের ডানপাশে দেখা যাচ্ছে), ৩০ জুন ২০২১ এর পর স্থানীয় দোকান থেকে কেনা আনঅফিসিয়াল হ্যান্ডসেটগুলো এই বিশেষ নিবন্ধনের জন্য বিবেচিত হবেনা। এবং ভবিষ্যতে সেগুলোর নেটওয়ার্ক বন্ধ করা হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে হয়ত নিকট ভবিষ্যতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
আরো জানুনঃ অনিবন্ধিত হ্যান্ডসেট বন্ধ হওয়ার ব্যাপারে যা জানা জরুরি
আপডেট ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ঃ বিটিআরসি তাদের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে যে “১লা অক্টোবর ২০২১ তারিখ হতে নেটওয়ার্কে নতুনভাবে সংযুক্ত সকল অবৈধ হ্যান্ডসেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।” পুরো পোস্টের স্ক্রিনশট এখানে দেয়া হল।
নিবন্ধনের আবেদনের পর হ্যান্ডসেট এর নিবন্ধন প্রক্রিয়ার বর্তমান অবস্থা যাচাই করা যাবে খুব সহজেই। ব্যবহৃত মোবাইল হ্যান্ডসেট এর বর্তমান অবস্থা যাচাই করুতেঃ
শর্তসাপেক্ষে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আনঅফিসিয়াল বা অবৈধ ফোন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অফিসিয়াল বা বৈধ করা যাবে। তবে সকল আনঅফিসিয়াল বা অবৈধ মোবাইল এই প্রক্রিয়ার সুযোগ পাবেনা। বিটিআরসির নির্ধারিত নিয়মে এই ফোন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে। আমাদের পোস্টে সম্পূর্ণ নিয়ম ছবি এবং ওয়েব এড্রেস সহ বর্ণনা করা হয়েছে।
আপনি যদি বিদেশ থেকে ব্যক্তিগতভাবে মোবাইল ফোন আনেন অথবা কেউ আপনাকে পাঠায়, যেটা ব্যক্তিগত ব্যবহার অথবা কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য, সেক্ষেত্রে যথাযথ কাগজপত্র এবং তথ্য সরবরাহ করলে ফোনটি নিবন্ধন করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে বিটিআরসি’র সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আরো বিস্তারিত আমাদের পোস্টে পাবেন।
এছাড়াও আপনার মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার এর মাধ্যম্যেও যেকোনো বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে জানা যাবে। সেক্ষেত্রে নিকটস্থ কাস্টমার কেয়ারে যান অথবা ১২১ এ কল করুন।
ভালো পোস্ট
ধন্যবাদ